* তৃতীয় দফায় বন্যার কারণে আতঙ্কে নিম্নাঞ্চলের মানুষ
* নদীর তীররক্ষা বাঁধ নিয়ে উত্তরাঞ্চলের মানুষ শঙ্কায়
* আগামী ২৪ ঘণ্টায় বন্যা পরিস্থিতি আরও অবনতির শঙ্কা
ভারী বর্ষণ আর উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে দেশের অধিকাংশ নদ-নদীতে বাড়ছে পানি। টানা বৃষ্টিতে ইতোমধ্যে সিলেট, সুনামগঞ্জ, রংপুর, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধার প্রধান নদ-নদীর পানি বাড়তে শুরু করেছে। তলিয়ে গেছে অনেক অঞ্চলের নদী তীরবর্তী এলাকা। এরমধ্যে সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলা সবচেয়ে বেশি বিপজ্জনক অবস্থানে রয়েছে। এদিকে গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি’র সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ (একনেক) সভায় সভাপতিত্বকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে সম্ভাব্য বন্যা মোকাবিলায় আগাম প্রস্তুতি গ্রহণ করতে বেসামরিক প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি এ সময় বলেন, আগস্ট মাসে সারাদেশে বন্যার আশঙ্কা রয়েছে। ওই সময় থেকে দেশে টানা বৃষ্টিপাতের পাশাপাশি প্রধান নদ-নদীগুলোর পানি বাড়ার প্রবণতা রয়েছে। বন্যার প্রভাব ও ধ্বংসযজ্ঞ থেকে দেশের মানুষকে রক্ষায় প্রশাসনকে প্রস্তুত থাকতে হবে। সাম্প্রতিক বন্যায় এই দুই জেলার ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ যখন ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে, ঠিক তখনই ধেয়ে আসা তৃতীয় দফার বন্যার কারণে তারা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। এছাড়াও ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমার নদীর তীররক্ষা বাঁধ নিয়ে শঙ্কায় উত্তরাঞ্চলের মানুষ। কারণ বর্ষা এলেই উত্তরের জনপদ রংপুর, লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রামের মানুষের শঙ্কা বাড়ে। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে ভাঙনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় ওসব নদ-নদীর দুইপাড়সহ চরাঞ্চলের বসিন্দারা। শুষ্ক মৌসুমে বাঁধ সংস্কার না হওয়ায় এবারো বর্ষা ঘনিয়ে আসায় ক্ষয়ক্ষতির শঙ্কা নিয়ে দিন কাটছে তাদের। উত্তরাঞ্চলের জেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত ১৬টি নদ-নদীর মধ্যে সবচেয়ে ভাঙনপ্রবণ ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, তিস্তা ও দুধকুমার। প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমেই ভাঙনের কবলে পড়ে ঘরবাড়ি ও ফসল হারাতে হয় এসব নদ-নদীর দুইপাড়ের বাসিন্দাদের। আগামী ২৪ ঘণ্টায় অতিবৃষ্টি এবং উজানের ঢলে দেশের বিভিন্ন এলাকায় বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র।
প্রায় এক মাস সময়ের মধ্যে তৃতীয় দফা বন্যার কবলে পড়েছে সিলেট। টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে তলিয়ে গেছে জেলার সীমান্তবর্তী চার উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা। ঢল অব্যাহত থাকায় বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। টানা বৃষ্টিতে সিলেট নগরেরও অনেক এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে সুনামগঞ্জে অনেক অভ্যন্তরীণ সড়কে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় দুর্ভোগে পড়েছেন নিম্নাঞ্চলের মানুষ। নতুন করে দেখা দিয়েছে ভাঙন আতঙ্ক। পার্বত্য জেলা বান্দরবান ও মধ্যাঞ্চল শেরপুরের বিভিন্ন নদীতেও পানি বাড়ছে। অন্যদিকে পার্বত্য জেলাগুলোর কোথাও কোথাও ভূমিধসের শঙ্কার কথা জানানো হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার ভোরে খাগড়াছড়ির আলুটিলার সাপমারায় পাহাড় ধসে ঢাকা-খাগড়াছড়ি ও ঢাকা-চট্টগ্রাম সড়কে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।
সাম্প্রতিক বন্যায় সিলেটে জীবনযাত্রা পুরোপুরি স্বাভাবিক না হলেও অনেক উপজেলা থেকে পানি নেমে গেছে। নদনদীর ১০ পয়েন্টের মধ্যে কেবল কুশিয়ারা নদীর ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্ট ছাড়া অন্যগুলোতে পানি বিপৎসীমার নিচে নেমে যায়। কিন্তু গত রোববার রাত থেকে পাহাড়ি ঢল ও বৃষ্টির কারণে সিলেট বিভাগের বিভিন্ন নদ-নদীর পাশাপাশি নিম্নাঞ্চলে পানি বাড়ছে। বিশেষ করে গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকে সুরমার কানাইঘাট পয়েন্টেও পানি আবার বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হতে শুরু করেছে। এছাড়াও সুরমার সিলেট পয়েন্টে, কুশিয়ারার অমলশীদ, শেওলা ও শেরপুর এবং লোভা, সারি, ডাউকি ও গোয়াইনসারি নদীর পয়েন্টে বিপদসীমার কাছাকাছি পানি প্রবাহিত হচ্ছে। গতকাল মঙ্গলবার সিলেটের বিভিন্ন নদীর ১০ পয়েন্টের মধ্যে চারটির পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। সুরমা নদীর গোলাপগঞ্জ এলাকা, জৈন্তাপুরের বড়গাঁঙ নদী, পিয়ান ও সারি নদীর বিভিন্ন এলাকায় পানি বেড়ে লোকালয়ে ঢুকতে দেখা গেছে। দু’দিনে ভারতের চেরাপুঞ্জিতে ৫০০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। সিলেট ছাড়াও সুনামগঞ্জ জেলার নদ-নদীতেও পানি বাড়ছে। দুই জেলার নদী ছাড়াও আবার পানি বাড়ছে গ্রামীণ এলাকায়। সকালে অনেক গ্রামীণ রাস্তা আবার তলিয়ে গেছে, পানি উঠছে বাড়িঘরে। এতে আবার বন্যার মুখে পড়েছেন এই অঞ্চলের লাখ লাখ মানুষ।
সিলেটে এর আগে ২৭ মে আগাম বন্যা দেখা দেয়। দুই সপ্তাহ স্থায়ী ওই বন্যায় পানিবন্দি ছিলেন ১০ লাখেরও বেশি মানুষ। প্রথম বন্যার পানি পুরোপুরি নামার আগেই ১৫ জুন ফের বন্যা দেখা দেয় সিলেটে। বিশেষ করে ঈদুল আজহার দিন ভোর থেকে ভারী বর্ষণে তলিয়ে যায় সিলেট নগরসহ জেলার বেশিরভাগ এলাকা। এই বন্যার পানি ক্রমেই বিস্তৃত হয়ে পুরো জেলায় ছড়িয়ে পড়ে। এতে সিলেটের সব উপজেলার অন্তত ১৩ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ে। তবে গত সপ্তাহ থেকে নামতে শুরু করে দ্বিতীয় দফার বন্যার পানি। এবার দ্বিতীয় দফা বন্যার পানি পুরো নামার আগেই গত সোমবার থেকে সিলেটে ফের বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। ইতোমধ্যে পাহাড়ি ঢলে কোম্পানীগঞ্জ, জৈন্তাপুর, কানাইঘাট ও গোয়াইনঘাট উপজেলার অনেক এলাকা তলিয়ে গেছে। টানা তিন দফা বন্যায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন এসব এলাকার বাসিন্দারা। তলিয়ে গেছে এসব উপজেলার রাস্তাঘাট ও ফসলি জমি। অনেকের ঘরবাড়িতেও পানি ঢুকে পড়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, গতকাল মঙ্গলবার সিলেটে পাঁচটি নদীর পানি ছয়টি স্থানে বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এরমধ্যে সুরমা নদীর পানি কানাইঘাট পয়েন্টে বিপদসীমার ১১৮ সেন্টিমিটার, কুশিয়ারার পানি আমলশীদ পয়েন্টে ৭১ সেন্টিমিটার, ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে ২২ সেন্টিমিটার ও কুশিয়ারা পয়েন্টে শূন্য দশমিক ৭ সেন্টিমিটার এবং সারিগোয়াইন নদীর পানি গোয়াইনঘাট পয়েন্টে ১০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বইছে।
পাউবো সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাশ বলেন, মূলত ভারতের চেরাপুঞ্জিতে ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে সিলেটে আবার বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। চেরাপুঞ্জিতে সোমবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ৪৮ ঘণ্টায় ৫০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের খবর পাওয়া গেছে। সেখানে আরও বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি বলেন, আগে থেকেই সিলেটের নদ-নদী ও হাওর পানিতে ভরাট হয়ে আছে। ফলে নতুন করে বৃষ্টি হওয়ায় ঢলের পানি নামতে পারছে না। এ কারণে দ্রুত লোকালয়ে পানি প্রবেশ করছে।
কানাইঘাট উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, গত সোমবার সকাল থেকে ঢলে কানাইঘাটে সুরমা ও লোভা নদীর পানি দ্রুতগতিতে বাড়ছে। ফলে আগে থেকেই ক্ষতিগ্রস্ত সুরমা ডাইকের অন্তত ১৮টি স্থান দিয়ে সুরমা ও লোভা নদীর পানি লোকালয়ে প্রবেশ করে উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন ও পৌর এলাকার জনপদ ফের তলিয়ে গেছে। তৃতীয় দফা বন্যায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন জৈন্তাপুর উপজেলার নিজপাট, জৈন্তাপুর ও চারিকাটা, দরবস্ত ও ফতেপুর ইউনিয়নের বাসিন্দারা। এসব এলাকায় অনেকেই নতুন করে আবার আশ্রয়কেন্দ্রে যাচ্ছেন। জৈন্তাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উম্মে সালিক রুমাইয়া বলেন, তৃতীয় দফায় ভারি বর্ষণে জৈন্তাপুর উপজেলার বন্যা পরিস্থিতি আগের আকার ধারণ করেছে। উপজেলায় বন্যার্তদের জন্য ৫৬টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। যেসব ঘরবাড়ি বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে, তাদের সময় নষ্ট না করে এখনই নিরাপদ আশ্রয়ে কিংবা নিকটবর্তী আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিতে হবে। সিলেট সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা সাজলু লস্কর বলেন, অতিবৃষ্টির কারণে কিছু এলাকায় পানি জমেছিল। তবে বৃষ্টি থামার পর পানি নেমে গেছে। সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা বৃষ্টির পানি যাতে না জমে সে জন্য কাজ করছেন।
সিলেট আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ শাহ মো. সজিব জানান, গত সোমবার সকাল ৬টা থেকে গতকাল মঙ্গলবার সকাল ৭টা পর্যন্ত ২৫ ঘণ্টায় সিলেটে ২৯৪ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টিপাত আরও কয়েকদিন অব্যাহত থাকতে পারে। তবে শুধু সিলেট সুনামগঞ্জেই নয়, দেশের উত্তরাঞ্চলের সব নদ-নদীর পানিও বৃদ্ধি পাচ্ছে। রংপুর বিভাগের তিস্তা, ধরলা, দুধকুমারের পানি বৃদ্ধি পেয়েছে এবং কিছু কিছু এলাকায় বিপদসীমা অতিক্রম করেছে। আজ বুধবার থেকে ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপদসীমা অতিক্রম করবে। সব মিলিয়ে সামনের এক সপ্তাহ দেশের উত্তরাঞ্চল ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের নদী তীরবর্তী মানুষের ভোগান্তির শেষ থাকবে না। ভারী বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে রংপুরে তিস্তা নদীর পানি বাড়তে শুরু করেছে। গতকাল কাউনিয়ার তিস্তা রেলসেতু পয়েন্টে পানি বিপদসীমার ৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। গত দু’দিনের বৃষ্টি এবং উজানের ঢলে গাইবান্ধার প্রধান ৪টি নদনদীর পানি আবারও বাড়তে শুরু করেছে। সেখানকার তিস্তার পানি বিপদসীমা অতিক্রম করেছে। তবে ব্রহ্মপুত্র, করতোয়া ও ঘাঘট নদীর পানি বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। টানা বৃষ্টিতে নেত্রকোনার প্রধান নদী উব্ধাখালী নদীর পানি বেড়ে বিপদসীমা ছাড়িয়ে গেছে। এছাড়া সোমেশ্বরী ও কংশের পানিও বেড়ে চলেছে।
এছাড়া আবহাওয়া সংস্থাসমূহের তথ্য উল্লেখ করে আরও জানানো হয়, দেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল, দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল ও তৎসংলগ্ন উজানে আগামী ২৪ ঘণ্টায় ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় উত্তরাঞ্চলের তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমার নদীসমূহের পানি সমতল সময় বিশেষে বৃদ্ধি পেয়ে কতিপয় পয়েন্টে স্বল্পমেয়াদে বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে। সতর্কীকরণ কেন্দ্র বলছে, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদ-নদীর পানি সমতলও বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা আগামী ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। এছাড়া গঙ্গা-পদ্মা নদীর পানি সমতল বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা আগামী ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। আগামী ৪৮ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্র নদের পানি সমতল বৃদ্ধি পেয়ে কতিপয় পয়েন্টে বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের মুহরী, ফেনী, হালদা, সাঙ্গু ও মাতামুহুরী নদীসমূহের পানি সমতল সময় বিশেষে বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার কাছাকাছি প্রবাহিত হতে পারে। এদিকে ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমার নদীর তীররক্ষা বাঁধ নিয়ে শঙ্কায় উত্তরাঞ্চলের মানুষ। কারণ বর্ষা এলেই উত্তরের জনপদ রংপুর, লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রামের মানুষের শঙ্কা বাড়ে। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে ভাঙনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় ওসব নদ-নদীর দুইপাড়সহ চরাঞ্চলের বসিন্দারা। শুষ্ক মৌসুমে বাঁধ সংস্কার না হওয়ায় এবারো বর্ষা ঘনিয়ে আসায় ক্ষয়ক্ষতির শঙ্কা নিয়ে তাদের দিন কাটছে তাদের। উত্তরাঞ্চলের জেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত ১৬টি নদ-নদীর মধ্যে সবচেয়ে ভাঙনপ্রবণ ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, তিস্তা ও দুধকুমার। প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমেই ভাঙনের কবলে পড়ে ঘরবাড়ি ও ফসল হারাতে হয় এসব নদ-নদীর দুইপাড়ের বাসিন্দাদের।
তবে চারটি প্রধান নদ-নদীর মধ্যে শুধু ব্রহ্মপুত্র, ধরলা ও দুধকুমারে ভাঙনরোধে তীর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ প্রকল্প চলমান। কিন্তু তিস্তায় প্রকল্প নেয়া হয়নি। যে কারণে এ বছর তিস্তা পারের বাসিন্দারা ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং ভুক্তভোগীদের সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, প্রতি বছর বন্যায় প্রথম আক্রান্ত হয় রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার লক্ষ্মীটারি, কোলকোন্দ, নোহালী, গঙ্গাচড়া সদর এবং গজঘণ্টা ইউনিয়ন। এর মধ্যে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয় গার্নারপাড়, বিনবিনার চর, শঙ্করদহ, পশ্চিম ইচলি, পূর্ব ইচলি, বাঘেরহাট, চর ঈশ্বরপুর, জয়রাম মৌজা, মর্নেয়া, রমাকান্ত এবং সারাই। এছাড়া প্রতি বছর তিস্তা নদীর পানিতে কাউনিয়া উপজেলার বালাপাড়া ইউনিয়নের গদাই, পাঞ্জরভাঙ্গা, নিচপাড়া, তালুকশাহবাজ, ঢুসমারা এবং হরিশ্বর গোপিভাংগা; টেপামধুপুর ইউনিয়নের চরগনাই, হযরত খাঁ; হারাগাছ ইউনিয়নে চর নজিরদহ শহীদবাগ এবং চর নজিরদহ এলাকার মানুষ ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়ে। অথচ বর্ষা পুরোপুরি শুরুর আগে বাঁধের ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) মেরামত করলে মানুষের ভোগান্তি অনেক কম হতো। সূত্র জানায়, ব্রহ্মপুত্র নদের ডান তীর রক্ষায় অনেক আগে স্থায়ীভাবে একটি বাঁধের কাজ শুরু হয়েছে। বর্তমানে চলমান রয়েছে বাম তীর রক্ষাকাজও। ব্রহ্মপুত্রের শুধু ভাঙনপ্রবণ এলাকাগুলোয় তীর রক্ষার কাজ করা হলেও পর্যায়ক্রমে নদের দুই তীর রক্ষা করার পরিকল্পনা করেছে পাউবো। তাছাড়া গত বছর থেকে চলমান ধরলা নদীর তীর রক্ষার কাজও। এরইমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে প্রায় ৮০ শতাংশ কাজ। ফলে ধরলা নদীর ভাঙন প্রবণতা অনেকটা কমে আসবে বলে আশাবাদী পাউবো। একইভাবে দুধকুমারেও চলমান তীর রক্ষা প্রকল্পের কাজ। কয়েকটি গ্রুপ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে কাজটি করা হচ্ছে। দুধকুমারেও শেষ হয়েছে প্রায় ৮০ শতাংশ কাজ। তবে এসব নদ-নদীর দুই পাড় ভাঙনরোধে প্রকল্পের কাজ চলমান থাকলেও ব্রহ্মপুত্রের মাঝে ছোট ছোট চর ও দ্বীপগুলো রক্ষায় কোনো প্রকল্প নেয়া হয়নি। তিস্তা নিয়ে মহাপরিকল্পনার কারণে শুধু তিস্তার তীর রক্ষায় কোনো প্রকল্প নেয়নি সরকার। এ কারণে গত বর্ষা মৌসুমে ব্রহ্মপুত্র, ধরলা ও দুধকুমারের ভাঙন কমে গেলেও ভেঙেছে তিস্তা। তবে সেখানে জরুরি ভিত্তিতে জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন রোধের চেষ্টা করেছিল পাউবো। বর্তমানে তিস্তা নদীর ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রাম, হাতীবান্ধা উপজেলার গোড্ডিমারী, সিন্দুর্ণা, ডাউয়াবাড়ী, পাটিকাপাড়া, সিঙ্গিমারী, কালীগঞ্জ উপজেলার তুষভাণ্ডার, ভোটমারী, আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা ও সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ, পঞ্চগ্রাম ও গোকুন্ডা ইউনিয়নের কয়েকটি ওয়ার্ড। কিছুকিছু এলাকায় বালির বাঁধ ও ব্লক দেয়া হলেও পুরোপুরি নদী শাসন না থাকায় প্রতি বছর বন্যায় নদীগর্ভে চলে যায় ফসলি জমি ও বসতভিটা। ভাঙন রোধে পাউবোর আগাম কোনো প্রস্তুতি না থাকায় নদীপারের বাসিন্দারা শঙ্কায় রয়েছেন। তাছাড়া তিস্তা নদীতে পরিকল্পিত বাঁধ নির্মাণ না হওয়ায় প্রতি বছর কমবেশি ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। এদিকে এ বিষয়ে কুড়িগ্রাম পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাকিবুল হাসান জানান, কুড়িগ্রাম জেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত ব্রহ্মপুত্র, ধরলা ও দুধকুমারের স্থায়ী তীর রক্ষায় প্রকল্প চলমান থাকলেও মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের আশায় তিস্তায় কোনো স্থায়ী প্রকল্প নেয়া হয়নি। এ কারণে বিগত বছরের মতো এবারো ভাঙনকবলিত এলাকায় জরুরি ভিত্তিতে কাজ করার কথা রয়েছে। তবে আগামীতে অন্যান্য নদ-নদীর মতো তিস্তায়ও স্থায়ী প্রকল্প বাস্তবায়নে কাজ করা হচ্ছে। প্রকল্প পাস হলে কাজ শুরু করা হবে।
অন্যদিকে রংপুর পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রবিউল ইসলামও স্বীকার করেন তিস্তার ডানতীর রক্ষা বাঁধের প্রায় পাঁচ কিলোমিটার ঝুঁকিপূর্ণ। এরমধ্যে গঙ্গাচড়া উপজেলার গার্নারপাড় এবং মর্নেয়ায় বাঁধের কিছু পয়েন্ট ঝুঁকিপূর্ণ। এছাড়া কাউনিয়া উপজেলার গদাই ইউনিয়ন এবং পীরগাছা উপজেলার ছাওলা ইউনিয়নে তিস্তা নদীসংলগ্ন তীরে ভাঙন রয়েছে।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata
বন্যা মোকাবিলায় আগাম প্রস্তুতি গ্রহণের নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর
ভারী বর্ষণ ও উজানের ঢলে বাড়ছে পানি ডুবছে জনপদ
- আপলোড সময় : ০২-০৭-২০২৪ ০৯:২০:১৫ অপরাহ্ন
- আপডেট সময় : ০২-০৭-২০২৪ ১০:২২:২৫ অপরাহ্ন
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ